এদিকে বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিএসইসি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাম্প্রতিক দুটি পদক্ষেপকে শেয়ারবাজার সূচকের ধারাবাহিক পতনের জন্য দায়ী করছেন।
আজ ডিএসইর ডিএসইএস সূচক ২ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমেছে, আর ডিএস ৩০ সূচক ২ দশমিক ৫১ শতাংশ কমেছে। নতুন চেয়ারম্যানের যোগদানের পর দেড় মাসে শেয়ারবাজারে কিছুটা উত্থান ঘটলেও বেশিরভাগ সময়ই পতন হয়েছে। এই সময়ে ডিএসইএক্স সূচক সামগ্রিকভাবে ৩২২ পয়েন্ট কমেছে।
বড় দরপতনের ঘটনায় আজ একদল বিনিয়োগকারী বিক্ষোভ করেছেন। তাঁরা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন। দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে ডিএসই ভবনের সামনে তাঁরা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক দরপতনের জন্য বিএসইসির ভুল নীতিকে দায়ী করে স্লোগান দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে দেখতে হবে স্বাভাবিক ঘটনাটির পেছনে কোনো অস্বাভাবিক কারণ রয়েছে কি না। সংস্কার হলে সব পক্ষকেই মূল্য দিতে হয়। যথাযথ সংস্কার ছাড়া বিনিয়োগকারীদের একতরফা মূল্য দিতে হলে সেটি অনভিপ্রেত।”
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, আজকের সূচক পতনের পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। প্রথমত, বেক্সিমকোর শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগে চার প্রতিষ্ঠান ও পাঁচ ব্যক্তিকে ৪২৮ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে, যা এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীকে বাজার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের নির্দেশে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর মালিকানা বদলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। যদিও এসব কোম্পানির তালিকাভুক্ত শেয়ারের লেনদেন বন্ধ হয়নি, কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুদিন শেয়ারবাজারে সূচকের উল্লম্ফন দেখা গেলেও পরে দরপতন শুরু হয় এবং সেই ধারা এখনও চলছে। বিএসইসির নতুন প্রশাসন কাজ শুরু করলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
আজ ঢাকার শেয়ারবাজারে মোট ৪৪০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের ৩৮৯ কোটি টাকা থেকে কিছুটা বেশি। তবে মাত্র ২৯টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে, আর ৩৪৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
এদিকে, আজ বড় দরপতনের দিনেই বিএসইসি আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের প্রক্রিয়া সহজ করার সুপারিশ করেছেন। এতে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন, মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খোন্দকার রাশেদ মাকসুদ সভায় বলেন, “একটি সমৃদ্ধ পুঁজিবাজার গড়তে বিএসইসি একা নয়, বরং সব প্রতিষ্ঠানকে ভূমিকা রাখতে হবে।”